Thursday 7 May 2020

প্রকৃবির খেলা

প্রতিদিন আকাশটা যেন একেকটি নতুন রূপের প্রকাশ ঘটায়… আমরা নানান জায়গায় ঘুরে বেড়াই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য প্রত্যক্ষ করব বলে… ঘরের জানলা দিয়ে তাকিয়ে দেখিনা…অবশ্য তাকালে শুধুই ইট কাঠের জঞ্জাল… আকাশটাকে দেখার উপায় আর কতটুকু… সেই অভিমানেই যেন প্রকৃতি আজ শোধ নিয়ে চলেছে,ঘরে আটকে রেখে বলতে চাইছে "একটু আমাকেও দেখো" ....
 তাই আজ তাকালাম, দেখলাম দুচোখ ভরে…সাদা কালো মেঘেদের অপূর্ব এক খেলা….একবার সাদা কালো কে ঢেকে সামনে এসে দাঁড়ায়,খানিক পর সাদা আবার উঠে দাঁড়ায় কালো কে ঠেলে সরিয়ে… ঠিক যেমন আমরাও আজ অপেক্ষায়… কবে সেই সুদিন এসে সামনে দাঁড়াবে, খারাপ এই দিন গুলিকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে… অপেক্ষায় !!

Wednesday 1 April 2020

মনের হদিশ - Mind Tracker

                                                              ১
                মফস্যলের একটি ছেলে আলেক্ষ্য দাশগুপ্ত । ছোট থেকেই বিজ্ঞানের প্রতি তার অগাধ ভালোবাসা।শুধুমাত্র পাঠ্য পুস্তকে ওর মন তৃপ্ত হত না।বাবার কাছে বিভিন্ন বই, বিজ্ঞান ভিত্তিক পত্র পত্রিকা কিনে দেওয়ার আব্দার করত।সেসব সংগ্রহ করা যেন নেশায় পরিনত হয়েছিল এক সময়।বাবা অক্ষয়বাবু অতি সামান্য চাকরি করতেন ঠিকই তবে ছেলের এই আব্দার গুলি যেন তাকে অনেক বড় স্বপ্ন দেখাতো… ফলে সেসব মেনে নিতে কোনদিন কার্পণ্য করেননি তিনি ।বিজ্ঞানের প্রতি টান তাকে এতটাই মশগুল করে রেখেছিল যে বিকেলে খেলতে ডাকলেও যেতে চাইত না আলেক্ষ্য ।একবার অন্যান্য বন্ধুদের দেখা দেখি কম্পিউটার চেয়ে বসেছিল সে,তখন তার বয়স চোদ্দ, নবম শ্রেনীতে পড়ে।বাবার হাতে তেমন টাকা না থাকায় সেই মুহুর্তে  না পারলেও তিনি কথা দেন ব্যবস্থা করবেন।আলেক্ষ্য ভাবে বাবার উপর চাপ না দিয়ে নিজেই চেষ্টা করে দেখবে,তবে বাবারও খানিক সাহায্য হয় ।একদিন খেলার নাম করে বন্ধুর বাড়ি গিয়ে কম্পিউটার খুলে বসে।ইন্টারনেট তখনও পাওয়া বেশ কষ্টসাধ্যই ছিল, গতি বড়ই কম তবু তার মধ্যেই একটি ই-মেল আউডি তৈরি করে নিজের নামে,স্বাভাবিক নিয়মেই বয়স বাড়াতে হয় তাকে, তারপর একটি আইডিতে বেশ বড় মেল পাঠায় সে।পিছনে বসে ওর বন্ধু দেখছিল সবই আর প্রশ্ন করছিল একটার পর একটা ,জবাব মেলেনি কোনো।কাজ মিটিয়ে বাড়ি ফিরে আসে আলেক্ষ্য।
                   বেশ কিছুদিন পর আলেক্ষ্য স্কুল থেকে ফিরে খেতে বসেছে, এমন সময় ফোন আসে একটা।কাছে অন্য কেউ না থাকায় নিজেই উঠে ফোন তুলল এবং যা শুনল তা আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে ওঠার জন্য যথেষ্ট।ফোনটা রেখে মা কেই ডাকে সে।আলেক্ষ্য জানায় বিবিধ বিজ্ঞান বিষয়ক পত্র-পত্রিকা পড়ার সুবাদে একটি প্রতিযোগিতা তার চোখে পরে বেশ কিছুদিন আগে, বর্নিত নিয়মানুসারে  ইংরাজি তে একটি সাইন্স ফিকশন লিখে সেই পত্রিকা সংস্থার মেলে পাঠায় ।ওনারা জানান ওর লেখাটি সকলের খুব পছন্দ হয় তবে পাঁচশ শব্দের একটু কম হওয়ায় ওনাদের বিচারে দ্বিতীয় পুরষ্কারের জন্য ওর নাম নথিভুক্ত করা হয়েছে।সেই পুরষ্কার বাবদ পঞ্চাশ হাজার টাকা তাকে পাঠানো হবে । আগামী দিনে সে লেখা যদি পত্রিকায় প্রকাশ পায়, তার বিক্রয়মূল্য অনুযায়ী রয়েল্টি বাবদ আরও কিছু টাকা পাঠানো হতে পারে,সে কথাও জানিয়েছেন তারা।সে টাকা কিছুদিনের মধ্যেই এসে পৌছবে তার ঠিকানায়।বাবা  জানতে পেরেও অতি আনন্দিত হন,ছেলের প্রতি গর্ব বোধ করেন ।ইতি মধ্যে আলেক্ষ্য ল্যাপটপ কিনবে মনস্থ করে ফেলে , ইন্টারনেট কানেকশনটির ব্যবস্থা করে দেবেন বলে কথা দেন অক্ষয়বাবু।
                                                               ২
                 আজ প্রায় এক মাস হয়ে গেল। বিদেশি পত্রিকা সংস্থা জানিয়েছিল খুব অল্প দিনেই টাকা এসে পৌছবে,কিন্তু তা আজও পৌছল না আলেক্ষ্যর হাতে।সে বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে অথচ সংস্থাটিতে ফোন করার উপায় নেই।এর মাঝে ওর বাবা খোঁজ নিয়েছেন পোস্ট অফিসে, তারা কোনো ইতিবাচক কথা শোনাননি তাকে।এর মধ্যে আরো একদিন পত্রিকা থেকে ফোন আসে পুরষ্কারের টাকাটি হাতে পেয়েছেন কিনা জানতে। ওনারা জানালেন লেখাটি পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে , রয়েল্টি স্বরূপ কিছু অঙ্কের টাকা পাঠাবেন অনতিবিলম্বে।তখন আলেক্ষ্য জানায় এক মাসেও সে টাকা তারা হাতে পায়নি.. শুনে অবাক হন ম্যানেজার সাহেব।তিনি জানান টাকা টি পেয়ে মেল পাঠালে তবেই বাকি টাকা পাঠাবেন ।
                 পরদিন সকালে স্কুলে পৌছেই প্রথমে কম্পিউটার ল্যাবে উপস্থিত হয় আলেক্ষ্য তবে সেখানে ইন্টারনেট পরিষেবা না থাকায় দ্রুত যায় অধ্যক্ষ মহাশয়ের কাছে।ঘটনাটি বিস্তারিত খুলে বলে, উনি বিনাপ্রশ্নে ল্যাপটপটি এগিয়ে দেন ওকে।যথা  নিয়মে নিজের অ্যাকাউন্ট খুলতে গিয়ে বাধা পায় আলেক্ষ্য।পাসওয়ার্ড তো সে ভুল দেয়নি তবে লাল রঙের অক্ষরে "Wrong Password" দেখাচ্ছে কেন বারবার।বুঝল, ই-মেল অ্যাকাউন্টটি হ্যাক করা হয়েছে।সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে হ্যাকড অ্যাকাউন্টটি রিসেট করে নিল সে।
           সে অ্যাকাউন্টে ঢুকতে পারে অবশেষে।ইনবক্স অর্থাৎ যেখানে সব মেল আসে ও সেভ‌ হয়ে থাকে সেখানে ও আরো অন্যান্য সব জায়গায় একটি মেলেরও চিহ্ন না থাকায় আলেক্ষ্য ট্র্যাশ বক্স খোলে,অর্থাৎ যেখানে প্রথম দফায় ডিলিট করা সব ইমেল থাকে যতক্ষন না তা সম্পূর্ণ ভাবে ডিলিট করা হয়।কম্পিউটারের পর্দায় চোখ পরতে একটু অবাক হল , শুধু ওর নিজের মেলটাই দেখা যাচ্ছে।যেহেতু পাঠানো হয়ে যাওয়া মেলে আর কিছুই করা সম্ভব হয়না কারন তা গ্রাহকের কাছে পৌছে গেছে,হ্যাকার কে ভিন্ন আরেকটি মেলে পরিবর্তিত ঠিকানা লিখে পাঠাতে হবে …সেটাই তন্ন তন্ন করে খুঁজেও পাওয়া গেল না।তবে খুঁজে পেয়ে যায় সংস্থার তরফ থেকে পুরস্কার ঘোষনা করা মেলটা। তড়িৎ গতিতে কয়েকটি কাজ সেরে অধ্যক্ষ মহাশয়ের অনুমতি নিয়ে পোস্ট অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় আলেক্ষ্য।
             খুব হাঁপাতে হাঁপাতে এবার একাই পোস্ট আপিসে এল সে।মফস্যলে , মানুষ খুব সহজেই পরিচিত ও আপন হয়ে  ওঠে একে অন্যের…সেই সুবাদে অনেক পিওন কেও চেনে আলেক্ষ্য।একজন কে ডেকে জানতে চাইল মানি অর্ডার অথবা বিদেশি স্ট্যাম্প মারা চিঠি বিগত কয়েকদিনের মধ্যে এসেছে কিনা।পিওন একটি মোটা খাতা এনে দেখায়…আলেক্ষ্য অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে,নিজের মনেই বলে"এটা তো..." তারপর ঐ অংশটুকু জেরক্স করে ওকে দিতে বলে ।ঠিক তেমন ভাবেই খুব দ্রুত একটি কাগজ এনে দেয় আলেক্ষ্যর হাতে।সাহচার্য পেয়ে খুশি হয়ে কুড়ি টাকা দিয়ে , "চা খেয়ো" বলে ছুটে যায় থানার দিকে।একটু পরে ও. সি -এর সাথে দেখা করল ,পত্রিকার সেই প্রতিযোগিতা লেখা কাগজটি,ওর মেলের প্রিন্ট,পুরস্কার পাওয়ার মেল ও ঠিকানার পাতার নকলটি সহ।ও সি এই চোদ্দ বছরের ছেলেটির উপস্থিত বুদ্ধিতে বেশ সন্তুষ্ট হলেন বলেই মনে হল, বললেন এটি আসলে সাইবার ক্রাইম ডিপার্টমেন্টের অধীনে তবে সঙ্গে চুরি বিষয়টা থাকায় ওনারাও দেখবেন খতিয়ে।বেরিয়ে আসার মুখে আলেক্ষ্যকে সাইবার ক্রাইম দপ্তরের মেল আইডি দিলেন।পাশের সাইবার ক্যাফে তে বসে যথা নিয়মে সব কাজ সেরে ফেলল আলেক্ষ্য।
             দুয়েকদিন পর থানা থেকে দেখা করতে এলেন স্বয়ং ও সি সাহেব।বেজার মুখে জানালেন সে টাকার হদিশ মেলেনি কোথাও।আর্যের বাবা থেকে সকল আত্মীয় পরিজনের মধ্যে কারোর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেই এত বড় অঙ্কের টাকা জমা পরেনি …ম্যানেজারের সাথে কথা বলে জেনেছেন তিনি।মন মরা হয়ে বসে রইল আলেক্ষ্য,বেশ অনেক দিন ভালো করে খায়নি সে।রয়েল্টির টাকা সঠিক পৌছলেও তা দিয়ে ল্যাপটপ কেনা সম্ভব না, সে অঙ্ক বড়ই সামান্য।কবে সে উপার্জন করবে এবং ইচ্ছে মত সরঞ্জাম কিনবে তার পড়াশোনার জন্য।এসব ভাবতে ভাবতে একই রকম মন খারাপ নিয়ে সে একদিন প্রায় সন্ধ্যা নাগাদ ফিরল টিউশন থেকে। ঘরে এসেই চোখে পরল তার নতুন ল্যাপটপের দিকে… আনন্দে উৎসাহে দিশেহারা।বাবা অক্ষয় বাবুর  মন তৃপ্ত হল .. এত দিনে সে তার একমাত্র ছেলের মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছে।
                                                                    ৩
                 বিজ্ঞান, সে সংক্রান্ত ভাবনা ও বিবিধ শাখার পড়াশোনার মধ্যেই কেটে গেছে স্কুল ও কলেজের গন্ডি।তার নেশাই হয়ে উঠেছে পেশা,একটি সরকারি কলেজে বিজ্ঞানের অধ্যাপক।বাবার উপর নির্ভর না করে নিজেই রোজগার করে নিয়েছে তার প্রয়োজনটুকু।বিভিন্ন বিদেশি প্রকাশনীর বইয়ে বেড়িয়েছে তার লেখা।বিজ্ঞানের বিভিন্ন দিকে নিজের জ্ঞান প্রসারিত করেছে।বিদেশে তাকে আহ্বান করেছে বহুবার তবু তাতে সে লুব্ধ হয়নি কোনোদিন।ছোট বেলার সেই দূঃখ জনক ঘটনাটি তাকে একটি আবিষ্কারের দিকে এগিয়ে দিয়েছে বারংবার।সেই আবিষ্কারটি আজ সে করে ফেলেছে,তার স্বপ্নের আবিষ্কার "মাইন্ড ট্র্যাকার".. ।এই আবিষ্কারে সে ব্যবহার করেছে বিজ্ঞান ও সুক্ষ্ম প্রযুক্তির মেলবন্ধন… প্রায় শ'খানেক ক্ষুদ্র যন্ত্র সে নির্মান করেছে স্বহস্তে।ব্যবহার পদ্ধতি , সুবিধা এবং কোন ক্ষেত্রে বিশেষত ব্যবহার করা উচিৎ সে সকল বৃত্তান্ত লিপিবদ্ধ করেছে আলেক্ষ্য।এবার তা নীরিক্ষনের প্রয়োজন।কিভাবে তা সম্ভব সেই নিয়ে খানিক ভাবতে লাগে সে।ক্ষনিকের মধ্যেই পাঠিয়ে ফেলে বেশ কয়টি বার্তা
              পরদিন সন্ধ্যা হতেই একে একে আসতে শুরু করেছেন অতিথিরা।এবার নিশ্চই বোঝাই যাচ্ছে বার্তার উদ্দেশ্য। অতিথিরা সকলেই ওর বিভিন্ন সময়ের বন্ধু , স্কুল জীবনের বন্ধু আর্য আর সুদীপ, কলেজের নিখিলেশ, অর্পন, মেঘনা, শ্রীরাধা।আজ সকাল থেকে পুঁথি পত্র থেকে দূরে, রান্নাঘরে মত্ত ছিল আলেক্ষ্য , সবার জন্য সে নিজেই রান্না করেছে। সান্ধ্য জলযোগ থেকে নৈশভোজ ।শুধু ঠান্ডা পানীয় আনিয়েছে দোকান থেকে।সকলকে একে অপরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে, বসতে বলল আরাম করে।নিজে অল্পক্ষনের মধ্যেই ঘরে গিয়ে আবার ফিরে এল।সবাইকে নিজে হাতে ঠান্ডা পানীয় দিয়ে টেবিলে রাখল এক থালা চিকেন পপকর্ন , ফ্রেঞ্চ ফ্রাইস ও ক্রিস্পি বেবি কর্ন।শুরু হল নানান গল্প।
              পুরনো দিনের আলাপচারিতায় পলকে কেটে গেল অনেকখানি সময়।রাত দশটা নাগাদ নৈশভোজ,নিজে হাতে তৈরি মাট‌ন বিরিয়ানী আর রায়তা বেরে দিল ছয় অতিথিকে।হঠাৎই মেঘনা বলে উঠল আলেক্ষ্যর একদম মনের কথাটা, "আচ্ছা সবাই মিলে সেই কলেজ জীবনের মত ট্রুথ অ্যান্ড ডেয়ার খেললে কেমন হয়? কার কি মত জানলে ভালো লাগত" … কেউই অমত করল না , সকলেরই নিজস্ব গাড়ী তাই ফেরা নিয়ে কেউ ভাবিত নয়।খাওয়া শেষে আরেক রাউন্ড ঠান্ডা পানীয়ে চুমুক দিয়ে শুরু হল খেলা।একটি বোতল ঘুরিয়ে তার থামার পর তার মুখে যে থাকবে তাকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেবে বোতলের পেছনের ব্যক্তি, এই হল খেলার চিরাচরিত নিয়ম।
         নিখিলেশ একটি বোতল নিয়ে সামনের সেন্টার টেবিলের উপর ঘুরিয়ে অপেক্ষা করতে লাগল,সেটি যখন থামল তার মুখ অর্পণ এবং তার বিপরীতে শ্রীরাধা।অর্পণ ট্রুথ বেছে নেওয়ায় তার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ে দিল শ্রীরাধা,সে নিয়ে হাসি ঠাট্টা হল বিস্তর… খেলা গড়াতে লাগল।নানা কথা ভাবতে ভাবতে বেশ অন্য মনষ্ক হয়ে পরেছিল আলেক্ষ্য, ঘোর কাটল নিখিলেশের কথায়, "আরে আলেক্ষ্য , প্রশ্ন কর আর্যকে!!" এতক্ষনে অপেক্ষার অবসান, বেশ গম্ভীর হয়ে প্রশ্ন করল , " বিদেশি পত্রিকা থেকে পুরষ্কার পাওয়া পঞ্চাশ হাজার টাকা কিভাবে তোর ঠিকানায় পৌছেছিল? খুব জানতে ইচ্ছা করে মাঝে মাঝে, একটু বল না?" … আর্যের মুখটা যেন মুহুর্তে রক্তহীন হয়ে গেল , তাও নিজেকে স্বাভাবিক বোঝানোর চেষ্টা করে "কই কোন টাকা? জানি না তো?" কিছু একটা কেঁপে উঠল আলেক্ষ্যর প্যান্টের পকেটে যা অপর আর কেউই টের পেল না। আলেক্ষ্য এবার মনে করিয়ে দিল,"নবম শ্রেনীতে পড়াকালীন আমি বিদেশি সংস্থায় কল্পবিজ্ঞান বিষয়ক গল্প লিখে তাদের একটি মেল পাঠাই যাতে আমাদের বাড়ীর ঠিকানাটি লিখেছিলাম তারপর সে টাকা কিভাবে তোর ঠিকানায় চলে গেল তা আজও পরিষ্কার নয়" … হেসে উঠল আর্য,বলল,"এখনও সেকথা মনে রেখেছিস আলেক্ষ্য, আচ্ছা শোন তবে… তুই তো পাসওয়ার্ড লেখা চিরকূটটা আমার কাছে ফেলেই চলে গেলি... আমি তোর মেল অ্যাকাউন্ট খুলে সেন্ট মেল থেকে তোর পাঠানো মেলটা পড়লাম, যেটা পাঠানো হয়ে যায় তার উপর তো আর কারসাজি খাটেনা… আমি অপেক্ষা করলাম ওদের জবাবের।দুদিন পরপর অ্যাকাউন্ট দেখতে লাগলাম,একদিন দেখলাম ওরা পুরষ্কারের বিষয় জানিয়ে মেল করেছে আর ঠিকানা চেয়েছে,আমি লিখলাম একটি অসুবিধার কারনে বাড়ি পাল্টেছি এবং আমার নতুন ঠিকানা এটি অর্থাৎ আমার ঠিকানা লিখে দিলাম আর পাসওয়ার্ডটা পাল্টে দি.. টাকাটা কদিন পর আসাতে চেকটা আমার এক দাদার অ্যাকাউন্টে ফেললাম,আমি যেহেতু মাত্র চোদ্দ অর্থাৎ নাবালক।সেই টাকা দিয়ে বাবা যা কিছুতেই কিনে দিচ্ছিলেন না একটি সাইকেল , তাই কিনলাম আর বাকিটা থাকল".. আলেক্ষ্য আরো একটি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল ,"তাহলে কারো অ্যাকাউন্টে কোনো বড় অঙ্কের টাকা ডিপসিট হয়নি কেন?সাইকেলের দোকান কি চেক নিয়েছিল?"...  আর্য কিঞ্চিৎ অস্বস্তিতে পরল ,"না মানে বলছিলাম…" ,কথা শেষ করতে পারেনি তার আগেই পেটে ব্যাথায় কোকিয়ে উঠেছে। শুধুমাত্র আলেক্ষ্য বুঝল সেই ব্যাথার কারন… বাকিরা অত্যন্ত চিন্তান্বিত হয়ে আর্যকে হাসপাতালে ভর্তি করার সিদ্ধান্ত নিল।আলেক্ষ্যর মনে জাগল একটি খটকা
                                                  ৪
                   আলেক্ষ্যর ঘুম ভাঙাল একটি ফোন।বোতাম টিপে কানে ধরতেই,"কলকাতা পুলিশ আপনাকে আদেশ করছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব লাল বাজারের হেড কোয়াটার্সে আসতে,একটি কেস-এ আপনি আমাদের মূল সন্দেহভাজন ব্যক্তি , ইনটারোগেট করা হবে".. ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ধড়মড় করে খাট থেকে উঠে পরল আলেক্ষ্য।কোনরকমে স্নান সেরে , দুটো পাউরুটি মুখে গুজে চা দিয়ে গিলে ঊর্ধশ্বাসে গাড়ী নিয়ে রওনা হল লালবাজারের উদ্দেশ্যে।রবিবারের সকাল রাস্তা প্রায় ফাঁকা, মাখনের মত গাড়ী এগোচ্ছে যেন আজ ,তাই আধা ঘন্টার মধ্যেই গন্তব্যে পৌছলেন বিজ্ঞানী ।
          খুব ভয়ে শঙ্কায় দরজা ঠেলে ঢুকলেন সি পি- এর ঘরে।খাকি উর্দিতে ভরে আছে ঘর,খুব গম্ভীর পরিবেশ।বিজ্ঞানীকে বসতে বললেন কমিশনার সাহেব।বাধ্য ছেলের মত বিনা প্রশ্নে বসে পরলেন।জলধগম্ভীর স্বরে প্রশ্ন ছুড়লেন অপর এক উর্দি পরিহিত,"কী কী খাইয়েছিলেন পার্টিতে?সব বলবেন… কিছু যেন বাদ না যায়" আলেক্ষ্য বলতে শুরু করলেন,"ওই তো সান্ধ্য জল খাবারে ঠান্ডা পানীয়, দোকান থেকে আনিয়েছিলাম,এ ছাড়া ছিল চিকেন পপকর্ন, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই আর ক্রিস্পি বেবিকর্ন… সব আমার নিজ হাতে তৈরি…আর… " কথা শেষ করতে না দিয়ে ফের প্রশ্ন এল,"ডিনার এ কি বানিয়েছিলেন" .. জবাব এল "আজ্ঞে নিজে হাতে তৈরি মাটন বিরিয়ানী আর রায়তা…" কমিশনার সাহেব এবার হাল ধরলেন ,"কি মশলা দিয়েছিলেন বলুন তো মশাই,আর্যবাবু গত এক মাস পেট ব্যাথায় কাবু…হাসপাতালে সব পরীক্ষা নীরিক্ষার পরেও সব রিপোর্ট ক্লিন…কিচ্ছু ধরা পরছেনা… " এবার অবাক হওয়ার পালা বিজ্ঞানী মশাইয়ের "ওমা!!! আর্য এখনও হাসপাতালে …কি হল ওর?" … কমিশনার সাহেব খুব সন্তর্পনে পকেট থেকে বের করলেন একটি কম্পনরত যন্ত্র…সবুজ আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে চারদিকে অর্থাৎ এ মিথ্যে…। আবার লুকিয়ে ফেললেন চট করে।তিনি যথাসম্ভব গাম্ভীর্য এনে বললেন,"দ্বিতীয় দফায় ইন্টারোগেশন হবে আপনার আগামী রবিবার , স্থান ও সময় জানানো হবে" …
                এই রবিবারও আলেক্ষ্যর ঘুম ভাঙল একটি ফোনেই, জানানো হল ,"আজ বিকেল ঠিক চারটের সময় সাদার্ন অ্যাভিনিউ এর কাছে এসে ফোন করবেন রাস্তা বলে দেওয়া হবে" … "মনে থাকবে" বলে ফোন কেটে দিল দুপক্ষই।যেমন আদেশ হয়েছে সেই সময়ের মধ্যে সারাদিনের কাজ মিটিয়ে ফেলে তৈরি হয়ে রওনা দিল।সাদার্ন অ্যাভিনিউ পৌছে ফোন গেল সেই নম্বরে।একজন এসে খুব দ্রুত বসে পরল ড্রাইভারের পাশের সিটে।আঙুলের নির্দেশে নিয়ে গেল গাড়ী।যথাস্থানে পৌছে ঝরের বেগে নেমে লোকটা উধাও হয়ে গেল পলকে।চারদিকে যেন চমক,বিজ্ঞানীর মগজে কিছুই ঢুকছে না যেন আজ…যন্ত্রচালিতের মত রক্ষীদের অনুসরন করলেন তিনি।
                  আরো একবার চোখ ধাঁধিয়ে গেল প্রেক্ষাগৃহে প্রবেশ করে।সুসজ্জিত মঞ্চ, সারি সারি চেয়ার রাখা তাতে মখমলের কাপড় দিয়ে ঢাকা।পাশেই একটি স্ট্যান্ড মাইক , বক্তৃতা দেওয়া হবে।খানিক্ষনের মধ্যে প্রেক্ষাগৃহ ভরে উঠল বহু মানুষে।বিজ্ঞান প্রেমী, অধ্যাপক, গবেষক, ছাত্র ছাত্রীরা, আলেক্ষ্যর স্থানীয়রা এবং সব চেয়ে বেশি যাদের দেখা যাচ্ছে তারা হলেন সাংবাদিক।অনুষ্ঠান শুরু হল কমিশনার সাহেবের অপূর্ব কন্ঠের বক্তৃতায়।তিনি জানালেন এই আবিষ্কারটি কতখানি সাহায্য করেছে অপরাধীদের বয়ান নিতে, নিরপরাধীকে ভূল বশত হেফাজতে রাখা ও শাস্তি দেওয়া অনেক গুনে কমে গেছে।তিনি এও জানালেন এই আবিষ্কার লুকিয়ে রাখার নয়, যা সত্যি মিথ্যে বুঝতে সাহায্য করে,তা সর্বসমক্ষে আনা উচিৎ , এই যন্ত্র শহরের অনেক অপকর্ম বহুগুনে কমিয়ে দেবে আগামী দিনে। তাই এর গুন বিচারের পর পুলিশ মহল সিদ্ধান্ত নেন বিজ্ঞানীকে সম্বর্ধনা দেওয়া হবে… ছড়িয়ে যাবে গোটা দেশে, বিশ্বে নাম হবে বিজ্ঞানী আলেক্ষ্য দাশগুপ্তর।এরপর একে একে সহ অধ্যাপকরা ওর বিষয়ে নানান ইতিবাচক কথা বললেন সবার মাঝে।সাংবাদিকেরা নানান প্রশ্নে জর্জরিত করে তুলেছেন আলেক্ষ্য কে।এই সব কিছুর মাঝে পেছন থেকে ভেসে এল একটি আর্জি,"আচ্ছা আমি কি একটু মঞ্চে এসে কথা বলতে পারি?".. সবাই তাকে আহ্বান করলেন… এবং তিনি শুরু করলেন কথা,"আলেক্ষ্য,আমার ছেলে, অনেক ছোট থেকেই বিজ্ঞানে মনোনিবেশ করেছে , আমি সাহায্য করার চেষ্টা করলেও ক্ষমতাই হত না।একবার ও জ্ঞানের ও গুনের পরিচয় দিয়ে বিদেশের পত্রিকা থেকে জিতে নেয় পঞ্চাশ হাজার টাকা যা দিয়ে ও ল্যাপটপ কিনবে স্থির করেছিল, কিন্তু সে অর্থ ও হাতে পায়নি"…নিজের প্রতি ঘৃনার অভিব্যক্তি এনে বলতে লাগলেন "কিভাবে পাবে এরকম একজন লোভী বাবা থাকতে ..." চমকে ওঠে আলেক্ষ্য , আপন মনে ভাবতে থাকে "বাবা কি বলছেন এসব" .... "হ্যা আমার লোভ হয়েছিল ভালো বাবা হয়ে ছেলেকে ল্যাপটপ দিয়ে খুশি হতে দেখব, তাই ওরই বন্ধুকে ব্যবহার করি কিছু অনৈতিক কাজে…ওরই বাড়ীতে চেক আসে এবং আপিস থেকে ফেরার সময় আমিই তা নিয়ে নি" … মাথা উঁচু করে তাকাতে পারেনা আলেক্ষ্য, আর্যকে সে ভূল বুঝেছে…পেছন থেকে একটা গলা ভেসে এল "হ্যা বন্ধু, কাকু কোনোদিন তোর কাছে ছোট হোক তা চাইনি সেই কারনেই , সেদিন রাতেও সত্যিটা জানাইনি".. হঠাৎ টের পেল এত দিনকার ব্যাথা আর সে একেবারেই অনুভব করছেনা। বুঝল, এই ব্যাথার ঔষধ কেবল সত্যি।
             
                

Monday 13 March 2017

অন্তিম সূর্য

অস্তগামী সূর্যের রূপ যদি দেখ তবে
অন্তিম শুধু দুঃখ শোকের তা ভুলতে হবে
অপূর্ব এক রক্তিম আভা আকাশখানি ছেয়ে
হলদে কমলা যেন তুলির টানে পরছে বেয়ে বেয়ে
তারই উপর খেজুর পাতা করছে হাওয়ায় খেলা
আকাশ পানে চলছে দেখ নানা রঙের মেলা!!

Sunday 12 March 2017

আকাশে জলে

আকাশে জলে মিশেছে দেখ এক সরল রেখা
তারই মোহে আজ এই কয়েক প্যংক্তি লেখা
এ যেন প্রকৃতির  অদ্ভুত   সুন্দর সৃষ্টি
চাহিয়া থাকিলে মোদের সরেনা কভু দৃষ্টি
জোৎস্না রাতে এই সৃষ্টির  মাধুর্য্য বৃদ্ধি ঘটে
কেহ করে ক্যামেরা বন্দি কেহ ধরে পটে
আমি প্রথম ছবিই তুলি,তুলি ধরি ঘরে
এই সকল সুন্দর কভু মন হতে না সরে